জান্নাতুল ফেরদৌস ইতির গুচ্ছ কবিতা ।
নিঃসঙ্গতা
রাত গভীর হলে
সবাই ঘুমিয়ে গেলে
পৃথিবীটা কেমন চুপ হয়ে যায়,
শুধু শব্দহীন নিরবতা,
কখনো বা ঝিঁঝি পোকার ডাক
কখনো রাত জাগা পাখির ডানা ঝাঁপটানো।
আর,
এ-ই যে আমি বসে আছি,
ভাবছি,
কবিতা লিখছি,
এইসব আর কী!
এভাবেই রাত যায়,
ভোর আসে।
নব আনন্দে সূচনা হয় নবতর দিনের।
তবু জানি
যাচ্ছে সময়, কমছে দিন
আসছে ডাক ওপার থেকে।
চলে যেতে হবে সব ছেড়ে,
সুদূরে।
একা এবং নির্ভার
রবে না তুমি,
হবে না সঙ্গী,
নিঃসঙ্গ আমার।
আমিও ফিরবো না আর,
দেখতে তোমায় আরবার।
জান্নাতুল ফেরদৌস ইতির গুচ্ছ কবিতা ।
ঐকতান
রাত দুপুরে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি এলে
নিস্তব্ধ ধরা সরব হয়ে ওঠে।
সিক্ত হয় শুষ্ক জনপথ।
ভাসিয়ে নিয়ে যায়
আমাদের পাপ শাপ, ব্যথা জীর্ণতা।
আর,
তুমি যখন আমার কাছে আসো
আলতো করে ধরো দুটি হাত,
মনে হয়,
পৃথিবীতে আর কোন হিংসা নেই
ক্রোধ-ঘৃণা কিচ্ছু নেই।
নেই কোন জরা- যন্ত্রণা।
বিদায় নিয়েছে বুঝি যত শোক-তাপ,
বাসা বেঁধেছে সেথা
অনন্ত ভালোবাসা
আর অনাবিল আনন্দ।
দ্য ফিউজিটিভ মোমেন্টস
সময়ের সুখগুলো অসময়ের ক্ষত হয়ে যায়।
অষ্টপ্রহর আষ্টেপৃষ্টে থাকা সুজন
কালের গর্ভে বিলীন হয়ে যায়।
যে থাকে হৃদয়ের গভীরতম প্রকোষ্ঠে
ছিঁড়েখুঁড়ে বেরিয়ে যায় অলিন্দ নিলয় ফেলে।
কী নিদারুণ রসিকতা চলছে সারাবেলা!
প্রাণের তপ্ত স্পন্দন হয়ে যায় নিরুত্তাপ
মস্তিষ্ক জুড়ে হাহাকারেরা স্থায়ী আবাস গড়ে
আফসোস আর অপূর্ণতার সুকঠিন বন্ধুত্বে
প্রেম-ভালোবাসা-বন্ধুত্ব আজ সর্বহারা।
সোনার খাঁচায় বন্দী সুখের সে দিন
আজ খাঁচা ছেড়ে ভীষণ পলায়নপর
ভালো লাগছে না তার বন্দীদশা আর!
এরচেয়ে ঢের ভালো যে দূরের আকাশ!
সুখের পাখি তা-ই আজ অসুখের সঙ্গী
সময়! আর কতোকাল রাখবে করে তোমার বন্দী!
জান্নাতুল ফেরদৌস ইতির গুচ্ছ কবিতা ।
শুভ জন্মদিন
শুভ জন্মদিন, ইতি।
শুভ হোক এ-ই তিথি।
আজও তুমি মানুষ চিনলে না!
বড় হতে হতে বুড়ো হয়ে গেলে,
কৃষ্ণবর্ণা কেশগুচ্ছ সাদা হয়েছে,
মিতালি পাতিয়েছে কাশফুলের সঙ্গে।
দু’চোখের পাতায় পাওয়ার চশমা
ছাড়তে পারে না তোমায় এক লহমা।
তবু আজও তুমি ভালোবাসো
বিশ্বাসে নিঃশ্বাস নাও,
আজও চোখে রাখো চোখ।
আর কতোকাল এমনি রবে তুমি
ভুলে যত পরিহাস আর পরিতাপ!
এবার একটু বড় হও,
দু’চোখ মেলে দেখো আকাশ
কত-শত অজানা পাখি
ওড়ে সেথা সাঁঝ – সকাল।
পাখির তো কেউ থাকে না,
ভরসা কেবল দু”টো ডানায়
তবু দেখো শক্তি কতো!
পরোয়া নেই মেকি দুনিয়ায়।
তুমি এবার সত্যি বড় হতে শেখো,
আর থেকো না অবুঝ হয়ে,
চিনতে শেখো দুনিয়াদারি
ভেজাল যেথা আটপ্রহরি।
আশেপাশের সুজন যত
অযুত-নিযুত জ্ঞানপাপী
জেনে নিও, বুঝে নিও
মানুষ নামের বহুরূপী।
এরই মাঝে দু’চারজন
পাবে তুমি খাঁটি সোনা
আগলে রেখো যত্ন করে
মনের কোণে যেন নিখুঁত বোনা।
তাদের নিয়েই বাঁচতে শেখো
হারতে যেন না হয় আর
দিনের শেষে ভরসা কোরো
মানুষ নামের নিজ সত্তার ।
জান্নাতুল ফেরদৌস ইতির গুচ্ছ কবিতা ।
মন খারাপের পংক্তিমালা
খুব ইচ্ছে করে নদীর কোলে পানিতে পা ডুবিয়ে একাকী বসে থাকি,
অথবা রোডসাইড পার্কের বেঞ্চিতে বসে জনসমাগম দেখি!
নয়তো রাস্তার কিনার ঘেঁষে হেঁটে চলে যাই দূর বহুদূর!
সরু পাড়ের নরম সুতির শাড়িতে নিজেকে জড়িয়ে
দু’পায়ে স্লিপার গলিয়ে
চুলগুলোকে পাঞ্চ ক্লিপে মুড়িয়ে
হাঁটা দিই অজানার উদ্দেশ্যে..
কী হয়, যদি একটা গোটা বিকেল পার করে দিই এভাবে
একাকী….
নিজের সঙ্গে নিজে …
রোজ তো সংসার স্রোতের তালে নিজেকে মেলাই,
ভাত রাঁধি, ঘর গোছাই, চা বানাই..
ঘর, বারান্দা, হেঁশেল দৌড়ে বেড়াই।
আজ না হয় পথিক হবো
পথের ধারের গাছেদের বন্ধু হবো,
গাছের ডালের পাখিদের গল্প শোনাবো।
পথশিশুদের হাতের মালা খোঁপায় গুঁজে নেবো..
অথবা
নদীর পানিতে পা দোলাতে দোলাতে মাছের সঙ্গে মিতালী করবো
মনের গহীনের যত শব্দাবলী
যা এতকাল কেবল আমারই সঙ্গী হয়ে ছিলো
সব আজ দেবো মাছেদের বলে…
আচ্ছা, আমার চোখের জলে মাছেদের কি কষ্ট হবে?
তাদের বাসস্থানের জল নোনাজলে ভরে দিলাম বলে?
জান্নাতুল ফেরদৌস ইতি
মন্তব্য করলাম টেস্ট করার জন্য ।