বেগম রোকেয়া উনবিংশ শতাব্দীর শেষার্ধে ১৮৮০ সালের ৯ডিসেম্বরও রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দ নামক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম জহিরউদ্দিন মোহাম্মদ আবু আলী হায়দার সাবের ও মাতার নাম রাহাতুন্নেসা চোধুরাণী বেগম রোকেয়ার পিতা ছিলেন পায়রাবন্দের জমিদাররি সর্বশেষ উত্তরাধিকারী।তাঁর মাতা ছিলেন টাঙ্গাইলের বলিয়াদিও জমিদার পরিবারের কন্যা।
বেগম রোকেয়া রচিত সাহিত্য পরিমাণে বিপুল না হলেও বৈচিত্র্যে ভরপুর ।তাঁর গ্রন্থগুলোর নাম মতিচুর (১ম ও ২য় খন্ড), Sultana`s Dream (সুলতানার স্বপ্ন, পদ্মরাগ ও অবরোধবাসিনী। মতিচুর (১ম খন্ড ) প্রকাশিত হয় ১৯০৫ সালে ঐ একই বছরে তিনি রচনা করেন Sultana`s Dream প্রথম সংস্করণ ১৯০৮ সালে প্রকাশিত হয়েছিল ।মতিচুর (১ম খন্ড) প্রকাশের ষোল বছর পওে ১৯২১ সালে প্রকাশিত হয় মতিচুর (২য় খন্ড)। এছাড়া প্রসিদ্ধ ইংরেজ লেখিকা মেরী করেলীর Murder of Delicin নামক উপন্যাসের মর্মানুবাদ করে তিনি রচনা করেন ‘ডেলিসিয়া হত্যা’।
বেগম রোকেয়া কবিত্ব প্রতিভার অধিকারিণী ছিলেন। সংখ্যায় কম হলেও তিনি উন্নতমানের কয়েকটি কবিতাও রচনা করেছেন। তিনি যে সমসত্ম কবিতা রচনা করেছিলেন তার মধ্যে বাসিফুল শশধর, নলিনী ও কুমুদ, কাঞ্চনজঙঘা , সওগাত, আপীল নিরূপম বীর, চাঁদ (পদ্মরাগ উপন্যাসের অমর্ত্মগত ) প্রভৃতি কবিতার নাম জানতে পারা গেছে।
রোকেয়া রচনাবলীতে ষোলটি প্রবন্ধ সংকলিত হয়েছে । এই সমসত্ম প্রবন্ধের ঈদ সম্মিলন , সিসেম ফাঁক, এন্ডি শিল্প, বঙ্গীয় নারীশিক্ষাসমিতি , লুকানো রতন, রাণী ভিখারিণী, উন্নতির পথে , সবেহ সাদেক, ‘ধ্বংসের পথে বঙ্গীয় মুসলিম’ প্রভৃতি উলেস্নখযোগ্য।মৃত্যুবরণের পূর্ব রাত্রিতেও তাঁর লেখনী ছিল সক্রিয়। মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্তে তাঁর শক্তিশালী লেখনী থেকে নির্গত হয়েছে তার শেষ লেখা ‘‘নারীর অধিকার’’।
১৯৩২ সালের ৯ই ডিসেম্বও ভোর রাতে বেগম রোকেয়া ইমেত্মকাল করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স শহিয়েছিল মাত্র ৫২ বায়ান্ন বছর।
কাজী মোহাম্মদ ইলিয়াস
কাজী মোহাম্মদ ইলিয়াস রংপুর শহরের মুন্সীপাড়ায় ১৯০১ সালের ২১শে সেপ্টেম্বও কাজী পরিবাওে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম কাজী মোহাম্মদ সৈয়দ ও মাতার নাম কামরম্নননেসা বেগম।তাঁর পিতামহের নাম কাজী মোহাম্মদ সামী। চার ভাই ও ছয় বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয় ছিলেন।তবে ভাইদের মধ্যে তিনিই প্রথম । তাঁর পূর্বপুরম্নষের বসবাস কোথায় ছিল তা জানা যায়না।তবে ধারণা করা হয় ,নবাবী আমলে তাঁর পিতামহ সরকার ঘোড়াঘাট রঙ্গপুরের কাজী হিসেবে মাহিগঞ্জের পূর্বদিকে নবদিগঞ্জে বসবাস করেছিলেন। ১৮৮০ সালের দিকে তাঁর পিতা কাজী মোহাম্মদ সৈয়দ রংপুর শহরের মুন্সিপাড়ায় চলে আসেন। তিনি দেওয়ানি আদালতে চাকরি করতেন। তিনি দেওয়ানি আদালতের সেরেসত্মাদার পদে তিনি উন্নীত হন।
আইন পেশায় নিয়োজিত ছাড়াও কাজী মোহাম্মদ ইলিয়াস ছিলেন একজন সংগঠনপ্রিয় ও নাট্যামোদী। ছাত্রাবস্থা থেকেই নাটকে অভিনয় করতেন তিনি। কারমাইকেল কলেজ ও বর্ধমানের বহরমপুর কলেজে অধ্যয়নকালে নাটকে তিনি অভিনয় করেছে।১৯২৫সালে বহরমপুর কলেজে নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ‘‘পরপারে’’ নাটকে তিনি অভিনয়ে অংশগ্রহন করেছিলেন।এই নাটকে ‘‘দাদা মশাই’’ চরিত্রে অভিনয় করে তিনি বিশেষ পরিচিতি অর্জন করেন।সে সময় তিনি পরিচিত হন খ্যাতিমান অনেক নাট্যব্যক্তিত্বেও সাথে।তাঁদের মধ্যে তুলসী লাহিড়ী ডা: জিতেন সোম, প্রবোধচন্দ্র মুখার্জী, ললিত প্রামাণিক, গিরীণ ঘোষ, রেখা চ্যাটার্জী, আবদুল মান্নান চৌধুরী প্রমুখ। আরও জানা যায় ,ডঃ মুহম্মদ শহীদুলস্নাহ, নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু ও বিদ্রোহীকবি কাজী নজরম্নল ইসলামের সাথে কাজী মোহাম্মদ ইলিয়াসের পরিচয় ছিল।
সংস্কৃতিচর্চায় অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পরবর্তীকালে ১৯৮৮ সালে রংপুর পৌরসভা কর্তৃক তিনি সংবর্ধিত হয়েছেন। ১৯৮৯ সালে রংপুরের তৎকালীন জেলা প্রশাসক রংপুর শিল্প ভবনের পক্ষে (অধুনা রংপুর শিল্পকলা একাডেমী) কাজী মোহাম্মদ ইলিয়াসকে স্বর্ণপদক প্রদান করেন। রংপুরের সম্ভ্রমত্ম কাজী পরিবারের কৃতিসমত্মান কাজী মোহাম্মদ ইলিয়াস। তিনি একাধারে সংস্কৃতিসেবী । তিনি ১৯৯৪ সালের ১৪ই এপ্রিলে ইমেত্মকাল করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৩ বছর।