মঙ্গলবার, এপ্রিল ২৯, ২০২৫
Google search engine
সব
    প্রচ্ছদসাহিত্য পাতাগল্পের পাতাদান | জুবাইদা পারভীন লিপি

    দান | জুবাইদা পারভীন লিপি

    দান | জুবাইদা পারভীন লিপি

    -মা ওমা আমিও একটা লাল জামা লিবো। আমাক লাল রংয়ের একটা জামা কিন্যাই দিত হবে তুমাখে। পহেলা বৈশাকে শগলাই লতুন জামা পরবে। আমিও পরবো।

    -খবরদার বুলছি, আর একটা কথাও বুলবিন্যা খো রিয়ামনি। আমাধের মুতুন গরীবধের ল্যাগ্যা বৈশাক না, বুঝ্যাচিশ? ক্যান যে বৈশাক আশে এই দুনিয়াত? রিয়ামনি কানের কাছে প্যান প্যান কর‍্যা কানদিশ ন্যাখো। যা বাড়িত যা। যা….।

    কথাটা বেশ চিৎকার করে মেয়েকে বলে কাজের বুয়া আকলিমা। আকলিমার একমাত্র সন্তান রিয়ামনি। ক্লাস সেভেনে পড়ে সে। আকলিমা রান্নার কাজ করে সরকারী এক বড় কর্মকর্তার বাসায়। তিনবেলায় টাটকা রান্না হয় ঐ বাসায়। তাই দিনের বেশির ভাগ সময় ওকে ঐ সাহেবের বাসায় থাকতে হয়। ওদিকে ফজরের নামাজ পড়েই আকলিমা, মেয়ের জন্য বাসী ভাত একটু হলুদ মরিচ পেঁয়াজ দিয়ে ভেজে চুলার পাশে ঢেকে রেখে বেরিয়ে পড়ে সাহেবের বাসার উদ্দেশ্যে। সাহেবের সরকারী বাসার বাউন্ডারীর বাহিরে আকলিমার বস্তি বাড়ি। কত কষ্ট বুকে চেপে রেখে ঐ সাত সকালে আকলিমাকে কাজে আসতে হয়, তা কেউ কখনো জানতে চায় না, জানতে পারেও না। অবশ্য এমনই কষ্টের জীবন হয় আকলিমাদের! ওদিকে রিয়ামনি ফের কান্না শুরু করলো।

    -মা ওমা আমাক একটা লাল রংয়ের জামা লিয়্যা দিবা? আমাধের শাতে ইশকুলে পড়ে কাকলি, উই তো কি শুন্দর জামা লিয়্যাছে। আমি লিবো মা। ঐযে শেলিম কাকার বিটি আছে না, উইও তো লাল আর হলুদের মুতুন রংয়ের জামা লিয়্যাছে।

    মেয়ের দিকে চোখ পাকিয়ে তাকালো আকলিমা। তারপর বললো,

    -তুই এ্যাখুনো বাড়িত য্যাশনি রিয়ামনি। যা বুলছি। তোর কি বাপ আছে? তোর বাপ যুদিল বাঁচ্যা থ্যাকতোক, তাহেলে তোকও লাল ফরাগ কিন্যা দিতো। মারে আমি তোর পড়হার খরচ যুগাতেই হিমশিম খ্যাচি। শগ কশ্ট তো তোর ল্যাগ্যাই করছি। ওরকুম জেদ করিশ ন্যা মা।রুজার রিদের শুমাতে শুন্দর দেখ্যা জামা লিয়্যা দিবো তোক ক্যামুন।

    রিয়ামনির কানে মায়ের কথাগুলো ঢুকছে না। মেঝেতে বসে সে বিলাপ করে কাঁদতে লাগলো।

    -ও আল্লাহ্! তুমি আমার বাপখে ক্যান লিয়্যা লিয়্যাছো? আ্যাজ বাপ থ্যাকলে আমাক লাল জামা লিয়্যা দিতোক। শগলারই বাপ আছে, আমার ক্যান বাপ মর‍্যাছে? তুমি কুনঠে আছো বাপ?

    রিয়ামনির বাবাকে আজ থেকে প্রায় এগারো বছর আগে কে বা কারা জবাই করে হত্যা করেছিলো, তা কেউই জানে না। ওর বাবার ছোট্ট মুদিখানার দোকান ছিলো গঞ্জের মোড়ে। এগারো বছর আগে পহেলা বৈশাখের রাতেই খুন হয় রিয়ামনির বাবা। রাত প্রায় আনুমানিক দশটার দিকে রিয়ামনির বাবা ফোন করে স্ত্রী আকলিমাকে বলেছিলো,

    -জানিস আকলি, আ্যাজ ব্যাচা বিক্রী ভালুই হয়্যাচে দুকানে। শেই শাত শকাল থ্যাক্যাই শগ বড় লোকেরা পুলাওয়ের চ্যাল ত্যাল মশলা কিন্যাছে। ভালুই ইমকাম হয়্যাচে আ্যাজ। শুন আমি খানিক পর বাড়ি আ্যাশপো। তুই কিন্তুক রিয়ামনিক জাগ্যিয়া রাখিশ। আমার বিটির ল্যাগ্যা একটা উপহার লিয়্যা আ্যাশপো আমি। লাল রংয়ের বেবী ফরাগ আ্যানবো।অল্প টাকাত পানু তাই কিননু রে। বিটি যেন না ঘুমায়, বুঝলি?

    এই ছিলো রিয়ামনির বাবার শেষ কথা, স্ত্রীর সাথে। এক ঘন্টা পার হতে না হতেই রিয়ামনির বাবা বাড়ি আসলো, তবে লাশ হয়ে। আজ পর্যন্ত কেউই বলতে পারে না, কে বা কারা কেন খুন করলো রিয়ামনির বাবাকে।তবে পুলিশ সহ অনেকের ধারনা দোকান বন্ধ করে টাকা নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে দুর্বৃত্তের কবলে পড়ে রিয়ামনির বাবা এবং খুন হয়।

    রিয়ামনি সাহেবের বাড়ির রান্নাঘরের মেঝেতে শুয়ে তখনো সুর করে কাঁদছে। এদিকে ওর কান্নার আঁওয়াজ পৌঁছে গেলো সাহেবের স্ত্রীর কানে। যদিও উনাদের ডুপ্লেক্স বাসা। অন্য একজন কাজের লোককে ডেকে সাহেবের স্ত্রী বলেন,

    -কে এত শব্দ করে কাঁদছে নিচ তলায়?

    -আম্মা…. ঐযে আমাদের রান্নার বুয়ার মেয়ে কাঁদছে।

    -এই ভরদুপুরে কাঁদছে কেন? কি সমস্যা?

    -ঐযে আম্মা পহেলা বৈশাখ আসছে, মেয়েটা লাল ফ্রক নিবে একটা, তাই অমন কাঁদছে।

    -ডাকো তো একটু, আকলিমাকে।উপরে আসতে বলো ওকে।জলদি ডাকো।

    -জ্বি আম্মা…ডাকতেসি ডাকতেসি…।

    দান | জুবাইদা পারভীন লিপি

    আকলিমা কখনো এই বাসার দোতলায় উঠেনি।ভয়ে ওর চোখ মুখ শুকিয়ে গেলো। কত কষ্টে সাহেবের বাসার কাজটা যোগাড় করেছিলো সে।আজ রিয়ামনির কারনে বুঝি কাজটা হারাতে হবে! ভয়ে জড়সড় হয়ে আকলিমা বললো,

    -আম্মা..ড্যাকছেন আমাক? কি হয়্যাচে আম্মা?

    -তোমার মেয়ে কাঁদছে কেন আকলিমা? কি সমস্যা ওর?

    -ওগ্ল্যা কথা শুনেন নাখো আম্মা।ওর বেয়াদবি হলে ওখে মাপ কোরেন গে আম্মা। ওযে বৈশাকে শগলা জামা লিবে তাই উইও লিবে।আমি কুনঠে টাকা পাবো আম্মা? আপনিই বুলেন!

    সাহেবের স্ত্রী হাসিমুখে বললেন,

    -ব্যস! একটা ফ্রক চায় সে? মাত্র একটা ফ্রক!

    -হয়! হয় গে আম্মা।

    -ডাকো দেখি তোমার মেয়েকে এখানে। একটু কথা বলি ওর সাথে।

    আকলিমার ভয় আরো বেড়ে যায়। বুঝে উঠতে পারে না সে,কি হতে চলেছে এখন। শেষমেষ এই বাড়ির কাজটা চলে গেলে যে মা মেয়েকে না খেয়ে থাকতে হবে। তার মধ্যে রিয়ামনির মাস্টারের বেতন তো আছেই। কোথায় থেকে দিবে আকলিমা মাস্টারের বেতন। খেয়ে না খেয়ে একমাত্র মেয়েকে সে পড়াচ্ছে।ওর যে খুব ইচ্ছা মেয়েকে উকিল বানানোর। মেয়ে একদিন উকিল হবে, এই আশায় বেঁচে আছে আকলিমা। মনে মনেই আকলিমা বলে,

    ‘লিজের বাপের খুনিখে ধরতে না পারুক। সাজা দিত না পারুক কিন্তুক অন্য কারু উপকারে তো লাগুক আমার বিটি আমার রিয়ামনি।’

    রিয়ামনি এখন সাহেবের স্ত্রীর সামনে দাঁড়িয়ে আছে। এই প্রথম সাহেবের স্ত্রী দেখলো আকলিমার মেয়েকে। ভীষণ মিষ্টি আর মায়ায় ভরা মুখ মেয়েটির। সাহেবের স্ত্রী বললেন,

    -তোমার নাম কি? স্কুলে যাও তুমি?

    -জ্বি আমার নাম রিয়ামনি। জ্বি আন্টি, স্কুলে যাই আমি। আমি ক্লাস সেভেনে পড়ি।

    সাহেবের স্ত্রী ভালো ভাবে লক্ষ্য করছে রিয়ামনি মেয়েটি বেশ চটপটেও।

    -তোমার স্কুলের নাম কি?

    -আন্টি, ইউসেপ স্কুল।

    -রোল নম্বর কত তোমার?

    -রোল নম্বর তিন!

    সাহেবের স্ত্রীর বেশ ভালো লাগছে মেয়েটির কথা শুনতে। যেমন বুদ্ধিদীপ্ত চেহারা, তেমনই কথাবার্তা। অথচ ওর মায়ের সাথে যখন কথা বলছে তখন রাজশাহীর স্থানীয় ভাষায় কথা বলছে। সাহেবের স্ত্রী আরো উৎসাহী হয়ে জিজ্ঞেস করেন,

    -শুধু লেখাপড়া করো? নাকি…..আরো কিছু করো?

    -জ্বি আন্টি, আমি গান করি। কবিতা আবৃত্তি করি।

    সাহেবের স্ত্রী আর কথা বাড়ায় না। শুধু বলে,

    -রিয়ামনি, খুব মিষ্টি তোমার নাম। ঠিক তোমারই মত। আচ্ছা শোনো মা, পহেলা বৈশাখে ফ্রক না, আমি তোমাকে সুন্দর একটা লাল শাড়ি কিনে দিবো কেমন। তুমি আর কাঁদবেনা। কি খুশি?

    -জ্বি আন্টি।খুব খুশি আমি। আন্টি আপনি খুব ভালো।

    দান | জুবাইদা পারভীন লিপি

    এদিকে আকলিমা চোখের জল যেন আর ধরে রাখতে পারছে না।শেষে ওড়নার এক কোনা দিয়ে জল মুছতে লাগলো। আর ওদিকে রিয়ামনির আনন্দ দেখে কে! সে রীতিমত সাহেবের স্ত্রীকে চমকে দিয়ে ‘থ্যাংকু আন্টি, আল্লাহ্ হাফেজ’ বলে বিদায় নিলো।

    সাহেবের স্ত্রী আকলিমার উদ্দেশ্যে বলেন,

    -বুঝছো আকলিমা, তোমার স্যারের সরকারী চাকুরী। আমরা এক জায়গায় খুব বেশিদিন থাকি না। কখনো তিন বছর, কখনো আরো কম সময় এক জায়গায় থাকি। যাহোক, মহান আল্লাহ্ বেছে বেছে এমন কিছু মানুষকে কেন যে আমার সামনে হাজির করেন, আমি জানি না সেটা। তবে আমি আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করি যে, মানুষের কিছুটা হলেও উপকার করতে পারি। অবশ্য এ সবই আমার আল্লাহর ইচ্ছায় হয়।

    আকলিমা অবশ্য সাহেবের স্ত্রীর কোন কথাই বুঝতে পারছে না। শুধু একটু পর পর মাথা নাড়ছে। অবশেষে সাহেবের স্ত্রী বললেন,

    -সন্ধ্যার পর তোমার সাথে কথা বলবো আমি। এখন নিচে যাও আকলিমা। রান্না করো জলদি। তোমার স্যার আসার সময় হয়ে আসলো।

    আকলিমা রান্নাঘরে দুপুরের থালা বাসন মাজছে। হঠাৎ-ই একজন কাজের ছেলে এসে বললো,

    -আকলিমা আপা, দেখবেন ম্যাডাম আপনাকে হয়তো অনেক টাকা দিবে। শোনেন, আমরা শুনেছি এই ম্যাডাম গরীব দুখী মানুষকে খুব সাহায্য করেন। উনার টাকায় পড়ালেখা করে এখন অনেকেই অফিসার হয়েছে।হুম বড় অফিসার।

    -আমাখে টাকা দিবে ক্যান ভাই, বুলেন তো? ম্যাডামরা বদলি হয়্যা রাশশাহী আ্যাশ্যাচে তিন মাশ হলো। এ্যাতো অল্প শুমাতে আমাখে কি এ্যামুন চিনলো ম্যাডাম যে টাকা দিবে? টাকা চাইন্যাখো আমি। এই বাড়িত আমার কাজডা যেন থাকে, তাহেলি হবে।

    বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামলো।সন্ধ্যার পর সাহেবের স্ত্রী যা বললেন আকলিমাকে,তা যেন সে বিশ্বাস করতে কিংবা বলা যায় বুঝতে পারছে না।মনে মনে বললো কেবল, ‘আমি কি শ্বপন দেকছি নাকি? এগ্ল্যা কি বুলছে ম্যাডাম? আমার বিটির পড়হা লেখার তাবৎ দায় দায়িত্ব শগ ম্যাডাম লিবে।সত্যি নাকি? সত্যি শুননু ত আমি!’

    সাহেবের স্ত্রী আকলিমার হাতে নগদ দুই হাজার টাকা দিলেন আর বললেন,

    -এখন থেকে প্রতিমাসে তোমার মেয়ের পড়ালেখা বাবদ তোমাকে দুই হাজার টাকা দিবো আমি। আমার লোকেরা সব সময় খোঁজ খবর রাখবে তোমার। টাকাটা সত্যি সত্যি মেয়ের পড়ালেখার জন্যই খরচ করছো কিনা সেটা কিন্তু দেখা হবে আকলিমা। আর হ্যাঁ আমরা যদি বদলি হয়ে চলে যাই অন্য কোথাও, তখন বিকাশ করে টাকাটা পাঠাবো বা যে কোন ভাবেই হোক সময় মত টাকাটা পাবে তুমি। মনে রাখবে আমরা বদলি হয়ে চলে গেলেও তুমি কিন্তু এই এলাকায় থাকবে। আর আমার লোকেরা ঠিকই তোমাদের খবর রাখবে , টাকাটা মেয়ের পড়ার জন্য খরচ হচ্ছে কিনা তাও দেখবে ওরা।

    -অবশ্যই ম্যাডাম টাকাডা আমার বিটির পড়হার জন্যাই খরচ করবো। আমার ইচ্ছ্যা আর বিটিরও ইচ্ছ্যা লেখাপড়হা শিক্যা বড় উকিল হবে গে উই। ম্যাডাম, আপনে আমার এতবড় উপকার করবেন, আমি ভ্যাবতেই পারিনিখো। কি দিয়্যা আপনের ঋণ শোদ করবো গে ম্যাডাম আমি।

    কথাটা বলেই আকলিমা ওর ম্যাডামের পা ধরে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে।ওদিকে ম্যাডাম বলেই চলেছে,

    -এই ছাড়ো ছাড়ো আকলিমা আমাকে ছাড়ো। কি করছো কি? এটা তো তোমার হক আকলিমা। ধনীদের সম্পদের উপর গরীবদের হক রয়েছে।

    নীচে গাড়ির আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে।তারমানে সাহেব বাড়ি আসছেন। আকলিমার ম্যাডাম আকলিমাকে বললো,

    -যাও আকলিমা নিচে যাও। তোমার স্যার আজ একটু আগেই মনে হয় বাড়ি ফিরলো। বাইরে বৃষ্টিও হচ্ছে অনেক। ভালোই হলো, দু’জন আজ একসাথে চা খাবো। তুমি বরং দ্রুত বেগুনি আর আলুর চপ করে ফেলো। মুড়ি মাখা দিয়ে ওগুলো খেতে বেশ লাগবে।

    খুশিতে ঝলমল করছে আকলিমার মুখখানি।দ্রুত বললো সে,

    -আচ্ছা যাছি ম্যাডাম। এ্যাখুনি আমি খাবারগিল্যান বানিয়্যা ফেলবো।

    আকলিমার স্যার আর ম্যাডাম দু’জন বারান্দায় বসে নাস্তা খাচ্ছে আর পুরনো দিনের গল্প করছে। ঝুম বৃষ্টি দেখতে দেখতে, পুরনো দিনের গল্প করতে ভালোই লাগছে দু’জনের। এরই মাঝে সাহেবের স্ত্রীর একটা ফোন কল আসে।দ্রুত সে ‘হ্যালো’ বলতেই, ফোনের ওপাশ থেকে বললো,

    -হ্যালো মিসেস জুয়াইরিয়া বলছিলেন? আমি এসএ পরিবহন থেকে বলছিলাম। আপনার একটা পার্সেল আছে। চাঁদপুর থেকে এসেছে।

    -হ্যাঁ আমি জুয়াইরিয়া।আচ্ছা ঠিক আছে আমি লোক পাঠাচ্ছি আনতে।

    সাহেব চায়ে চুমুক দিতে দিতে স্ত্রীকে বললেন,

    -কুরিয়ার?

    -হু…।আমি বুঝেছি কে পাঠিয়েছে আর কি পাঠিয়েছে।

    সাহেব হেসে বললেন,

    -নিশ্চয় আরো বেশ ক’টা কুরিয়ার থেকে আজ কালের মাঝেই ফোন পাবা তুমি?

    -হ্যাঁ….হয়তোবা ফোন আসবে, সাথে আরো অনেক কিছুই আসবে আমাদের তিন জনের জন্য। জানো, এটুকু ভেবেই আমি অবাক হই, আমি হয়তো মানুষের ভালোর জন্য সামান্য কিছু করি, তাতেই ওরা খুশি হয়ে আমাকে যতটুকু পারে খুশি করে। তাহলে দুনিয়াতে ভালো কিছু কাজ করে গেলে, না জানি আল্লাহ কত খুশি হবেন আর কি পুরস্কার-ই বা দিবেন!

    -জুয়াইরিয়া, যা কিছু ভালো হয় তা আল্লাহর ইচ্ছায় হয়। আজ সতেরো আঠারো বছর ধরে কতগুলো দরিদ্র ছেলে মেয়েকে তুমি পড়ালেখার খরচ দিয়ে তাদের পাশে থেকেছো। তাদের পরিবারের পাশে থেকেছো। আর আজ আল্লাহর ইচ্ছায় ওরা নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে গিয়েছে। ভালো কর্ম করছে। আর এজন্য আখেরাতে আল্লাহ্ তোমাকেও পুরস্কৃত করবেন জুয়াইরিয়া। আবার দ্যাখো দুনিয়াতেও আল্লাহ্ আমাদেরকে কত সুখ আর শান্তিতে রেখেছেন।একমাত্র ছেলেকে নিয়ে কত সুখে আছি আমরা।

    দান | জুবাইদা পারভীন লিপি

    স্বামীর মুখের দিকে চেয়ে তৃপ্তির হাসি হাসলেন জুয়াইরিয়া।

    -তোমার মত স্বামী আর জিনান এর মত নম্র ভদ্র ধার্মিক ছেলে পাওয়াও আমার জন্য বিরাট ভাগ্যের ব্যাপার। তোমাদের সাপোর্ট না পেলে আমি এই দান খয়রাত করতে পারতাম না নিশ্চয়! জানো তো, দান করার জন্য আসলে ধনী হবার প্রয়োজন নাই, সুন্দর ইচ্ছায় যথেষ্ট। কারো জন্য শুভকামনা, সুন্দর ব্যবহার, মানুষকে সুপরামর্শ দেওয়া, পথ হারাকে পথ দেখানো , পথ থেকে অনিষ্ঠকারী জিনিস সরিয়ে ফেলা এ জাতীয় সব কর্মই তো দান! কি ঠিক বললাম তো?

    জুবাইদা পারভীন লিপি
    জুবাইদা পারভীন লিপি
    একই ধরনের লেখা

    আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুনঃ

    আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
    এখানে আপনার নাম লিখুন

    - Advertisment -
    Google search engine

    সব থেকে বেশি পঠিত পোস্ট

    সাম্প্রতিক মন্তব্য