মঙ্গলবার, এপ্রিল ২৯, ২০২৫
Google search engine
সব
    প্রচ্ছদসাহিত্য পাতাবই আলোচনা‘‘জীবনকে কোনো মেয়ে এত বেশি দেখে ফেললে, তারমধ্যে কিশোরীর চপলতা থাকে না।’

    ‘‘জীবনকে কোনো মেয়ে এত বেশি দেখে ফেললে, তারমধ্যে কিশোরীর চপলতা থাকে না।’

    ‘‘জীবনকে কোনো মেয়ে এত বেশি দেখে ফেললে, তারমধ্যে কিশোরীর চপলতা থাকে না।’

    নিজের বইয়ের চুক্তি সাক্ষর করতে গিয়েছিলাম চলন্তিকা প্রকাশনীর অফিসে। প্রকাশক কোনো একটা কাজে বাইরে ছিলেন। আমি অপেক্ষা করছিলাম। তখন একটা  পাণ্ডুলিপিতে চোখ আটকে গেল। দেখেই বোঝা যাচ্ছিল সেটা প্রুফরিডিং হয়ে এসেছে। নামটা দেখেই আগ্রহী হয়ে হাতে নিয়েছিলাম, ‘চট্টলায় এক ডাইনি থাকে’। আমি নিজেও চট্টগ্রামের বাসিন্দা বলেই নড়েচড়ে বসে পাণ্ডুলিপিটা পড়তে শুরু করলাম। একটু পড়েই প্রকাশক এলেন। নিজের পাণ্ডুলিপির চুক্তি সাক্ষর করে সেদিনের মতো ফিরে এসেছিলাম। পাণ্ডুলিপিটা আর পড়া হয়নি। অপেক্ষা করছিলাম কবে বইটা প্রকাশিত হবে। কবে হাতে পাব। যথারীতি অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে বইটা প্রকাশিত হলো। আমার ধারণা ছিল বইটা পাঠকমহলে একটা হুলুস্থুল ফেলে দিবে। কিন্তু সেরকম কিছু হয়নি। কোনো এক অজ্ঞাত কারণে বইটি নিয়ে পাঠকের মাঝে তেমন চর্চাও দেখছি না। বিষয়টা আমাকে খুবই দুঃখ দেয়।

    যাইহোক ধান ভানতে শিবের গীত আর না গাই। চট্টলার ডাইনি পড়ে আমার কেমন লেগেছে সেটা বলি।

    প্রথমে ছোটো করে কাহিনী সংক্ষেপটা জানিয়ে রাখি।

    প্রতিটি কেসে সফল হওয়া এস আই জাবির। তার একটা বাতিক আছে, বিভিন্ন স্থানকে ঘিরে প্যারানরমাল ঘটনাগুলো নিয়ে সে খুব আগ্রহবোধ করে। এ ধরণের প্রচলিত কাহিনীগুলো সে জানতে চায় এবং সেগুলো নিয়ে ঘাটাঘাটি করে। এটা তার একটা শখ বলা যায়, যেটা নিয়ে তার সহকর্মীরা বেশ হাসাহাসি করে। চট্টগ্রামের একটি মহিলা হোস্টেলে এক ছাত্রীর খুন হয়। ভিক্টিমের পাশেই একটা পেন্টাগন আঁকা ছিল। নির্দিষ্ট সময় পরপর একে একে আরও চারটি রহস্যজনক হত্যাকাণ্ড ঘটে যায়। এবং সব লাশের সাথেই পেন্টাগন এর সাথে কিছু অদ্ভুত জিনিসপত্র পাওয়া যায়। যেমন, গরুর মাথার খুলি, শতপদী পোকা, স্টাফড দাঁড়কাক। তদন্ত করতে গিয়ে জাবির বুঝতে পারে এসব একজন সিরিয়াল কিলারের কাজ এবং চট্টলায় প্রচলিত এক কিংবদন্তির সাথে এই খুনগুলো সম্পর্কিত। কে এই সিরিয়াল কিলার?

    আর কী সেই কিংবদন্তি? শুধুই কি চট্টলায় এক ডাইনি থাকে? না… এই কিংবদন্তিটি ডাইনি সম্প্রদায় ও তাদের পোষা এক অদ্ভুত ভয়ানক দর্শন জন্তুর। কিংবদন্তি বলে এই জন্তুর নাম জরুরাক্ষস। যাকে বশ করতে চায় এক তান্ত্রিক। কিন্তু জরুরাক্ষসকে বশ করা এতো সোজা না। এরজন্য তন্ত্রসাধনা ও নরবলি দিয়ে কঠিন এক যাত্রাপথে অগ্রসর হতে হয়। এই যাত্রায় সফল নাহলে জরুরাক্ষস তাকে এমন ভয়ানক মৃত্যুু দেবে যার চাইতে নিজেই নিজেকে মেরে ফেলা অনেক সহজ।

    তদন্ত করতে গিয়েই জাবির জানতে পারে চট্টলায় এখনও এক ডাইনি থাকে। খুনগুলোর সাথে কি সেই ডাইনির সম্পর্ক আছে? নাকি এর নেপথ্যে আছে অন্য কোনো চক্রান্ত? জাবির কি পারে নরবলির এই মহাযজ্ঞ বন্ধ করতে?

    ‘‘জীবনকে কোনো মেয়ে এত বেশি দেখে ফেললে, তারমধ্যে কিশোরীর চপলতা থাকে না।’

    এবার আসি পাঠপ্রতিক্রিয়ায়। গল্পের শুরুটা যেভাবে হয়েছে তাতে আমি রীতিমতো মুগ্ধ। একেবারে গা ছমছমে উত্তেজনাময় হরর ফিল্মের আবহ ছিল। একজন বুড়ো তান্ত্রিক আত্মহত্যা করতে চাইছে। কারণ সে এমন কারো হাতে মৃত্যুর আশঙ্ক্ষা করছিল যার হাতে মৃত্যু তার কাছে চরম ভয়ের, যন্ত্রণার ও বিভীষিকাময়। এর চাইতে আত্মহত্যা করাটাই তার কাছে সহজ মনে হয়েছে। এই দৃশ্যপট এমনভাবে লেখক উপস্থাপন করেছেন যে আমি তার লেখনশৈলীতে মুগ্ধ হয়ে পড়েছিলাম। এরপর কাহিনী ট্রেনের গতিতে ছুটে গেছে। কোথাও অসামঞ্জস্যতা ছিল না। কিছু কিছু জায়গায় মনে হয়েছিল, এটা কীভাবে সম্ভব? যেমন মানুষের শরীরের চামড়ায় লেখা। কিন্তু পরে সেগুলোরও ব্যাখ্যা পেয়েছি। একটি নির্দিষ্ট মহিলা কলেজ ও হোস্টেলের মেয়েদের ও তাদের পরিচিত লোকদের মধ্যেই কেন হত্যাকাণ্ডগুলো ঘটছে এই প্রশ্নটাও মাথায় এসেছিল। কিন্তু সেটারও উত্তর পেয়ে গেছি। শ্রাবণীর আচরণ ন্যাকা ও অস্বাভাবিক মনে হয়েছে। কিন্তু সেটার কারণও জানা গেছে যেটা আসলেই যৌক্তিক ছিল।

    উপন্যাসটাতে দুর্বোধ্য কিছু ছিল না। বর্ণনা সাবলীল ছিল। যেভাবে লেখক উপন্যাসের ইতি টেনেছেন সেটা বিষাদমাখা ভয়ংকর সুন্দর।

    বইটিতে খুবই ছোটোখাটো দুই একটা অসংগতি চোখে পড়েছে। এতো সুন্দর লেখনশৈলী সেখানে কয়েকটা বাক্য আমার পছন্দ হয়নি। মনে হয়েছিল, বাক্যটা অন্যরকম করে লেখা যেত, বা শব্দচয়ন ঠিক হয়নি। যেমন, ‘মেয়েদের মধ্যে রাগত গুঞ্জন উঠল’ বাক্যটি। আর ডাইনি এলেনা রিভেরার উত্তরসূরির সাথে জরুরাক্ষসের কথোপকথনটাও খুবই ফর্মাল বা মেকি ও দীর্ঘ মনে হয়েছে। এটা একান্তই আমার ব্যক্তিগত প্রতিক্রিয়া। সবার একই রকম নাও লাগতে পারে।

    পছন্দের একটি বাক্য দিয়ে আমার লেখা শেষ করছি,

    ‘‘জীবনকে কোনো মেয়ে এত বেশি দেখে ফেললে, তারমধ্যে কিশোরীর চপলতা থাকে না।’ কী নিদারুণ সত্য কথা, তাই না?

    ‘‘জীবনকে কোনো মেয়ে এত বেশি দেখে ফেললে, তারমধ্যে কিশোরীর চপলতা থাকে না।’

    একনজরে

    চট্টলায় এক ডাইনি থাকে
    লেখকঃ রায়হান মাসুদ
    জনরাঃ অতিপ্রাকৃত ভৌতিক রহস্যোপন্যাস
    প্রকাশকঃ রাশেদ রানাচলন্তিকা)
    প্রচ্ছদঃ আল নোমান
    মুদ্রিত মূল্যঃ ২৬০ টাকা

    জীবনকে কোনো মেয়ে এত বেশি দেখে ফেললে, তারমধ্যে কিশোরীর চপলতা থাকে না।’

    চট্টলায় এক ডাইনি থাকে
    চট্টলায় এক ডাইনি থাকে

    বই আলোচনা- সালসাবিলা নকি

    একই ধরনের লেখা

    লেখা যার মাঝেছে অনেক কিছু #18

    দান | জুবাইদা পারভীন লিপি

    জান্নাতুল ফেরদৌস ইতির গুচ্ছ কবিতা

    আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুনঃ

    আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
    এখানে আপনার নাম লিখুন

    - Advertisment -
    Google search engine

    সব থেকে বেশি পঠিত পোস্ট

    সাম্প্রতিক মন্তব্য