ঘুরে এলাম “ন্যাশনাল প্যালেস কাতালুনিয়া | The Palau Nacional de Catalunya | তুনা ফেরদৌসী
বার্সেলোনায় যারা বেড়াতে আসেন তারা অবশ্যই এই রাজবাড়ি ভ্রমণ করেন।কারণ অনেকগুলো।
প্রথমত, এটা একদমই বার্সেলোনার প্রাণকেন্দ্র “এসপানিয়া”য় অবস্থিত যেখানে সহজেই যে কেউ পৌঁছে যেতে পারে।
দ্বিতীয়ত,এখানে ঘুরতে এলে যেমন এই ঐতিহাসিক নিদর্শন উপভোগ করা যায়,একইসাথে এর আশেপাশে থাকা শপিং মল,শপিং সেন্টার,অন্যান্য মনুমেন্ট ও ঘুরে দেখা যায়। বছরের বিভিন্ন সময় এসপানিয়াতেই পোশাক মেলা,কম্পিউটার মেলা,মোবাইল মেলা,গাড়ির মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।
তৃতীয়ত এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হল এত সুন্দর স্হাপত্য শিল্প দেখে চোখ,হৃদয় সবই পরিতৃপ্ত করা যায়।
বার্সেলোনায় বসবাস করে এখানে বেড়াতে যাব না,তা কখনও হবার নয়।তাইতো ঘুরে এলাম এই পুরাতন রাজবাড়ি থেকে।পুরাতন বলার কারণ এখানে এখন আর রাজ পরিবারের কেউ থাকেন না।এটা ১৯৩৪ সাল থেকে কাতালুনিয়া ন্যাশনাল আর্ট মিউজিয়াম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে । ১৯৯৬ থেকে ২০০৪ সাল নাগাদ এটি প্রায় ৫০০০ শিল্পকর্মের সংগ্রহশালা হয়ে উঠেছে।

এই স্থাপত্যশৈলি মন্টজিক পাহাড় (Montjuic hill)এ অবস্থিত।এটা স্প্যানিশ রেনেসাঁ যুগের স্হাপনা।১৯২৯ সালে আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী (1929 International Exhibition) এর প্রধান আকর্ষন ছিল এই রাজবাড়ি।এর ডিজাইন করেন ইউজেনিও সেনদোয়া (Eugenio Cendoya) এবং এনরিক কাতা (Enric Cata)।
এই সুবিশাল প্রাসাদ প্রাঙ্গনে রয়েছে ছোট বড় অনেকগুলো ফোয়ারা।কী তাদের রুপ! তবে শুধুমাত্র শুক্র এবং শনিবার সন্ধ্যায় এই ফোয়ারাগুলোতে রঙবেরঙের আলোকসজ্জা করা হয় যা দেখতে ভীর জমায় শত শত দর্শনার্থী।
এসপানিয়া মেট্রো স্টেশন থেকে বের হলেই প্রাসাদচূড়া চোখে পড়ে ।আমাদের মিউজিয়াম দেখার উদ্দেশ্য ছিল না,আমরা চেয়েছিলাম ফোয়ারার রঙের খেলা দেখব।মিউজিয়াম দেখতে হলে সকালের দিকেই যেতে হয় কারণ বিকেল পাঁচটায় মিউজিয়াম বন্ধ হয়ে যায়। সন্ধ্যার আগে যেহেতু আলোকসজ্জা করা হয় না তাই সকালে না গিয়ে আমরা শেষ বিকালে যাব বলে ঠিক করলাম।কিন্তু এর আগে প্লাসা এসপানিয়ায় একটু ঘোরাঘুরি করাই যায়।
তাই দুপুর বারোটার দিকে এসপানিয়া পৌঁছে আমরা প্রথমে গেলাম “আরেনাস”নামক শপিং মলে।এই মলের বিশেষত্ব হলো এখানে অনেক অনেকদিন আগে স্পেনের বিখ্যাত ষাঁড়ের লড়াই হতো।বর্তমানে সেই ভেন্যুকেই অত্যাধুনিক শপিং মলে রুপান্তরিত করা হয়েছে।এখন বুল রিঙের জায়গাটায় বাচ্চাদের জন্য খুব সুন্দর খেলার ব্যবস্থা করা হয়েছে।এই শপিং মলের আরেকটা বিশেষত্ব হলো এর রুফটপ থেকে পুরো প্লাসা এসপানিয়া এবং রাজপ্রাসাদ দেখা যায়।এছাড়াও এখানে রয়েছে অনেকগুলো সুসজ্জিত রুফটপ রেস্টুরেন্ট।তবে আমরা দুপুরে ইন্ডিয়ান রেস্তোরাঁয় খাব বলে ঠিক করেছিলাম। “আরেনাস” থেকে বের হয়ে একটু ভিতরের দিকে হেটে গেলেই পাওয়া যাবে ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্ট।সেখানে পেট ভরে খেয়ে অবশেষে প্যালেস গ্রাউন্ডে গেলাম।
ঘুরে এলাম “ন্যাশনাল প্যালেস কাতালুনিয়া | The Palau Nacional de Catalunya | তুনা ফেরদৌসী

সুন্দর পরিপাটি চারিদিক।প্রাসাদচূড়ায় পৌঁছানোর জন্য ধাপে ধাপে সিঁড়ি এবং এসকেলেটরের ব্যবস্থা রয়েছে।পুরো প্রাসাদ চত্তর ঘুরে দেখতে দেখতে কখন যে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এল বুঝতেই পারলাম না।প্রাসাদের দুইদিকেই অনেকদূর পর্যন্ত বিস্তৃত।শেষপ্রান্তে দাঁড়ালে পুরো বার্সেলোনার সৌন্দর্য দেখা যায়।আমার কেবলই মনে হচ্ছিল এইসব পথেই হেটেছে কত রাজা,রাণী,রাজপুত্র,রাজকন্যা।ল্যান্ডিঙগুলোতে দাঁড়িয়ে একসময় তারা প্রজাদের সুখ-দুঃখের কথা শুনতেন।এসব ভাবতে ভাবতেই দেখলাম সূর্য তার শেষ কিরণ দিয়ে দিগন্ত রাঙিয়ে বিদায় নিতে চলেছে।শীতের হিম হিম বাতাসমাখা সেই রঙিন সন্ধ্যার রূপ লিখে প্রকাশ করা সম্ভব নয়।
আমরা মূল প্রাসাদের সিঁড়িতে এসে বসলাম।একদল লোক তাদের বাদ্যযন্ত্রে সুন্দর সুন্দর গানের সুর তুলছিল ।সেসব শুনে কেউ কেউ তাদের টাকা,খুচরো পয়সা দিচ্ছিল। কিন্তু কোন বাধ্যবাধকতা নেই। না দিতে চাইলেও তারা সুরের মূর্ছনায় মুগ্ধ হতে বাঁধা দেয় না।তবে এতটাই বিমোহিত হয়েছিলাম যে খুশিমনেই তাদের ঝুলিতে কিছু দিতে ইচ্ছা করছিল।
ঘুরে এলাম “ন্যাশনাল প্যালেস কাতালুনিয়া | The Palau Nacional de Catalunya | তুনা ফেরদৌসী


সন্ধ্যা শুরু হতেই শুরু হয়ে গিয়েছিল ফোয়ারার রঙধনু।বাদকদলের সুর আর জলরাশির রঙবেরঙের রূপ দেখে এতটাই মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম যে ঘড়ির কাঁটা যে দৌঁড়ে চলেছে তা যেন ভুলেই গেলাম।
অবশেষে একমুঠো ভাললাগার আবেশ নিয়ে বাড়ির পথ ধরলাম।