বুধবার, সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৪
Google search engine
সব
    প্রচ্ছদচলন্তিকা মিডিয়াসাক্ষাৎকারআজ থেকে কয়েক দশক পরে এখনকার এই সময়টি বাংলা সাহিত্যের নবজাগরণের যুগ...

    আজ থেকে কয়েক দশক পরে এখনকার এই সময়টি বাংলা সাহিত্যের নবজাগরণের যুগ হিসেবে লেখা হয়ে থাকবে । ফৌজিয়া খান তামান্না

    Fawjia Khan Tamanna
    ফৌজিয়া খান তামান্না

    ফৌজিয়া খান তামান্না… ভাষার মাসে যার এ পৃথিবীতে আগমন। ফেব্রুয়ারি মাস শুধু মাত্র অধিকার, আন্দোলন, সংগ্রাম আর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের গৌরবই বহন করে না, একই সাথে ফাল্গুনের রঙ লাগে বনে বনে এবং প্রতিটি প্রকৃতি প্রেমি মানুষের মনে। ঠিক এই মাসের মতোই কঠিন ও কোমলের সমন্বিত রূপ লেখক ফৌজিয়া খান তামান্নার।জন্ম ও বেড়ে ওঠা বরগুনা জেলার একদম দক্ষিণের উপজেলা পাথরঘাটার একটা ভীষণ এঁদো গ্রাম কালমেঘায়। কালমেঘার কালো মেঘের আড়ালে সূর্যরশ্মির দীপ্ততায় বেড়ে ওঠেন তিনি। নিজের ভেতর ধারণ করেন কালমেঘার প্রতিটি ধূলিকণাকে। বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকের সাহিত্য পাতায় অনেক আগেই কালো অক্ষরে নাম রচিত হয়ে গেলেও সংসার, সন্তান সব কিছু গুছিয়ে উঠতে দীর্ঘদিন তিনি বিরত ছিলেন সাহিত্য জগত থেকে। কিন্তু সৃষ্টিশীলতা যার রন্ধ্রে রন্ধ্রে তাকে ভবিতব্যই আবার ফিরিয়ে আনে উপযুক্ত আসনে। জীবনধর্মী ও মনস্তাত্ত্বিক উপন্যাস লিখে পরিচিতি লাভ করলেও পাশাপাশি তিনি বহু কবিতা আর গানও লিখেছেন। একাধারে সম্পাদক ও একজন সংগঠক হিসেবেও সফলতার স্বাক্ষর রেখেছেন। আমরা কথা বলেছি লেখনীর জাদুময় প্রভাবে আস্তে আস্তে ভাষাশিল্পী হয়ে ওঠা লেখক ফৌজিয়া খান তামান্নার সাথে। জানতে চেয়েছি তার জীবনের নানান দিকগুলো সম্পর্কে, সাহিত্যের সাথে তার পথ চলার রাজকীয় উপাখ্যান উঠে এসেছে একটি নান্দনিক আলাপচারিতায়,সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সানজিদা হোসাইন মিমি।

    ফৌজিয়া খান তামান্নার লেখা পড়তে

    একজন লেখকের প্রথম প্রকাশিত বই কেমন হওয়া উচিৎ |

    সানজিদা হোসাইন মিমিঃ আপা কেমন আছেন?

    ফৌজিয়া খান তামান্নাঃ আলহামদুলিল্লাহ,ভালো আছি।

    সানজিদা হোসাইন মিমিঃ কিছুদিন আগেই শেষ হলো অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২২। শুরুতেই আপনার কাছে বইমেলা সম্পর্কে জানতে চাই। আপনার দৃষ্টিতে কেমন ছিল এবারের বইমেলা?

    ফৌজিয়া খান তামান্নাঃ আমার দৃষ্টিতে আলাদা কিছু মনে হতে হলে, আমার নিজের সম্পর্কে কিছু বলতে হয়। ২০২০ এর আগে বইমেলায় গিয়েছি কয়বার, একটু কষ্ট করে হলেও কড় গুনে বলতে পারব। কারণ, বইয়ের রাজ্যে বিচরণ হলেও বইমেলার মাহাত্ম্য বুঝতাম না। আর আমি ব্যক্তিগতভাবে ভিড়ে অসুস্থবোধ করি ছোটোবেলা থেকেই। কোনও মেলায়ই আমি যাই না, ঈদের বাজারেও যাই না। কলেজে পড়ার সময় কলেজে যেদিন ব্যান্ড শো হতো, সেদিন কলেজে যেতাম না। সেই আমি ২০২০ এ দুইদিন বইমেলায় গিয়েছি। অসম্ভব ভিড়ে চিড়ে-চ্যাপ্টা হয়ে অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলাম, দীর্ঘদিন ভুগেছিও। ২০২১ এর ভাঙা মেলায়ও সপ্তাহে দুই তিনদিন গিয়েছি। লোকজন ছিল না, অল্পসময়ের মেলা, যাওয়া আসাই সার ছিল। সেদিক থেকে সত্যিকার অর্থে এবারকার বইমেলাই ছিল আমার জন্য প্রথম সার্থক মেলা। এই মেলায় শুধু সশরীর উপস্থিতি নিশ্চিত করতে নানান ধরনের ঔষধপত্রে আমি আগে থেকেই সজ্জিত হয়ে প্রস্তুত ছিলাম। আলহামদুলিল্লাহ, সর্বমোট ছয় সাত দিন ছাড়া প্রতিদিনই মেলায় গিয়েছি। যদি বইমেলায় উপস্থিতি মুখ্য হয়, সেক্ষেত্রে খুব ভালো মেলা কাটিয়েছি। বই ভালো যাওয়া যদি মুখ্য হয়, তাহলেও নতুন পুরানো মিলিয়ে আমার তিনটি বইই পাঠক চেয়ে কিনে নিয়েছেন, যাদের অনেকেই লেখককে চেনেন না। এমনকি আমার কাছ থেকেই বই নিয়েছেন, এটি না জেনেই যে আমিই ওই বইয়ের লেখক। কোনও রকম প্রচারণা ছাড়াই আমার যে পরিমান বই মেলায় গিয়েছে, এতে আমি খুশি না হলে পাঠকদের প্রতি অকৃতজ্ঞ হতে হবে। সম্পাদক হিসাবে লেখক ও পাঠকদের কাছে গুরুত্ব ও সম্মান পেয়েছি। চলন্তিকায় ছিল বইমেলার প্রাণস্পন্দন। মেলার পুরোটা সময় লেখক পাঠকদের নিয়মিত আড্ডায় চলন্তিকা মুখর ছিল। মেলা শেষে যখন অন্যান্য নামী প্রকাশনী চিন্তিত মুখে মেলার হিসাব মেলাতে হিমসিম খাচ্ছিল, তখন চলন্তিকা নানামুখী প্রাপ্তির ঝুড়ি বয়ে হাসিমুখে মেলার ঝাপ নামিয়েছে। আমার নিজের প্রথম সফল বইমেলা সম্পর্কে আমি শুধু ভালো কথাগুলিই বলতে চাই। খারাপ যা ছিল, অন্য সবার সঙ্গে আমিও দেখেছি। সেসব মনেও রাখতে চাই না। লাখো লেখক প্রকাশক ও কোটি পাঠকের প্রাণের মেলা প্রতিবছর সফল হোক, সুন্দরভাবে ভালোর সঙ্গে।

     

    আজ থেকে কয়েক দশক পরে এখনকার এই সময়টি বাংলা সাহিত্যের নবজাগরণের যুগ হিসেবে লেখা হয়ে থাকবে ।ফৌজিয়া খান তামান্না

    সানজিদা হোসাইন মিমিঃ এবার একেবারে জীবনের শুরুতে চলে যাই। আপনার শৈশব কেটেছে কালমেঘায়। কেমন ছিল শৈশবের দিনগুলো?

    ফৌজিয়া খান তামান্নাঃ সহজভাবে বলতে গেলে আমার ছোটোবেলাটা আর দশটি গ্রামের মেয়ের মতো একইভাবেই কেটেছে। তবুও আমি নিজেই তখনও বুঝতাম, এখনও বুঝি, আমার ছোটোবেলাটা ছিল বৈচিত্র্যময়। আমার বাবা ঢাকায় চাকরি করতেন, সেই সুবাদে বছরে দুই তিনবার লম্বা ছুটিগুলিতে ঢাকায় কাটিয়ে যেতাম। তখনকার ঢাকায় আমার জন্য মূল আকর্ষণ ছিল, প্রতিবার ঢাকার বাসায় এসে আব্বুর নতুন সংগ্রহ করা একগাদা বই পেতাম। এবং আমার চেষ্টা থাকত ছুটির মধ্যেই সবগুলি বই পড়া শেষ করার। এই ক্ষেত্রে একটি কথা বলতে চাই, আমি পড়তে শেখার পর প্রথম বই হিসেবে কোনও শিশুতোষ বই পাইনি। আমি তৃতীয় শ্রেনীতে প্রথম পাঠ্যবইয়ের বাইরে পড়তে শুরু করি কালমেঘাতেই, পুরানো একগাদা বেগম পত্রিকা, দস্যু বনহুর সিরিজ, কপালকুন্ডলা, ন হন্যতে, দেবী চৌধুরানী ও শরৎ রচনাবলী দিয়ে। অতএব, আর কাউকে বুঝতে না দিলেও আমি জানতাম যে আমি সমবয়সীদের চেয়ে পাকা। আমি এসএসসি পাশ করা পর্যন্তও কালমেঘা থেকে তিন মাইল দূরের উপজেলা সদর পাথরঘাটা পর্যন্ত যাওয়ার রাস্তা, কালমেঘা থেকে কাকচিড়া পর্যন্ত যাওয়ার সাত মাইল রাস্তা, কালমেঘা থেকে বৌঠারানি যাওয়ার দেড় মাইল রাস্তা মাটির ছিল। বর্ষায় এই রাস্তাগুলোয় যেতাম অবশ্যই হেঁটে এবং পাজামা হাঁটুর নিচ পর্যন্ত তুলে খালি পায়ে। আমাদের বাড়ি থেকে হাইস্কুলের দূরত্ব পনের মিনিটের হাঁটার রাস্তা। বর্ষার পুরোটা সময় প্রায় চারমাস জুতা পরে স্কুলে যাইনি কোনওদিন। মাত্র বছর দুই হয়, কালমেঘায় বিদ্যুৎ সংযোগ এসেছে। অতটা নিভৃতে আমাদের স্কুল হলেও তখনকার খুলনা বিভাগের মধ্যে কয়েকবার শ্রেষ্ঠ স্কুল নির্বাচিত হয়েছিল। স্কুলের একজন শিক্ষক খুলনা বিভাগের শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচিত হয়েছেন। স্কুলের নাম ছিল কালমেঘা মুসলিম বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়। স্কুলে সকল ছাত্রীর মাথায় কাপড় দেওয়া বাধ্যতামূলক ছিল। তবুও সপ্তাহে একদিন পাঠ্য বহির্ভুত কার্যক্রমে প্রতিটি ছাত্রছাত্রীর কোনও না কোনওভাবে অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক ছিল। অবশ্যই সেসব কার্যক্রমে অংশগ্রহণে আমার সরব উপস্থিতি থাকত সর্বাগ্রে। কালমেঘায় পড়াশোনা করাটা ছিল আমার এপর্যন্ত জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়। এখন পেছনে তাকিয়ে ওই সময়টিকে শ্রেষ্ঠ ভাবছি, তা কিন্তু নয়। আমি তখনই জানতাম, আমি খুব ভালো সময় কাটাচ্ছি।  কালমেঘায় আমি এত ভালো সময় কাটিয়েছি যে, কলেজে ঢাকায় পড়তে আসতে আমি রাজি হইনি। আমার সবটুকু আত্মবিশ্বাসের গোড়াপত্তন কালমেঘাতেই হয়েছে।

    সানজিদা হোসাইন মিমিঃ লেখালেখির শুরু কি শৈশব থেকেই?

    ফৌজিয়া খান তামান্নাঃ এই প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে একটু নাতিদীর্ঘ শিবের গীত গেয়ে নিই। আমি ছোটোবেলা থেকেই ভীষণ কল্পনাপ্রবণ।  আমার স্মৃতিতে যতটা পেছন পর্যন্ত মনে আছে, তার বেশিরভাগটাই কল্পনার বসবাস। আমি সবার সঙ্গে কথা বলছি, হাসছি, খেলছি, খাচ্ছি, বেড়াচ্ছি, কিন্তু আমার অবস্থান যেন কখনোই সবার সঙ্গে নয়। সবাই দেখছে, আমি মাদুরে বসে সবার সঙ্গে খাচ্ছি। কিন্তু আদতে তখন হয়তো আমি কোনও দামী রেস্টুরেন্টে বা নদীর পাড়ে গাছের নিচে বসে খাচ্ছি। মানে হলো, যে কোনো সময় আমি আমার মনের মতো যে কোনো জায়গার আবহ মনে মনে তৈরি করে নিতে পারতাম তখনও, এখনও পারি। এবং বাস্তবিকই বিষয়টি খুব আনন্দদায়ক। খুব ছোটোবেলা থেকেই আমি যে কোনও প্রতিকুলতায় নিজের জগতে বাস করে দুঃসময় ভুলে থাকতে পারি। এবং যখনই লিখতে শিখেছি, সঙ্গে সঙ্গে আমার কল্পনাগুলি লিখতে শুরু করে দিয়েছিলাম। যদিও কখনও কাউকে সেসব দেখাতাম না।

    সানজিদা হোসাইন মিমিঃ ছোটোবেলায় কখনো মনে হয়েছে বড়ো হয়ে সাহিত্যিক হবেন?

    ফৌজিয়া খান তামান্নাঃ ঠিক সাহিত্যিক হব, এমনকিছু একদম ছোটোবেলায়ই মনে হয়নি। কলেজে উঠে সাহিত্যিক হওয়ার বাসনা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। এবং তখন খুব লিখেছিও। তবে বিয়ের পর সাংসারিক ব্যস্ততায় সব এলোমেলো হয়ে যায়। আমার বরাবরই উদ্দেশ্য ছিল, আমার চিন্তাগুলো ছড়িয়ে দেওয়া, যে কোনও ভাবে। এই সময়ে এসে আমি সেজন্য লেখালেখির প্লাটফর্মটিকে বেছে নিলাম।

    সানজিদা হোসাইন মিমিঃ গ্রাম থেকে শহুরে জীবনে আসার পরের রূপান্তরটা কেমন ছিল?

    ফৌজিয়া খান তামান্নাঃ আমি এ কথা শপথ করে বলতে পারি, গ্রাম থেকে শহরে এসে আমার মানসিক, চারিত্রিক, বেশভূষা বা চলন- বলনে কোনও রূপান্তর ঘটেনি। জীবনযাত্রায় যে পরিবর্তন এসেছে এটি শুধুই স্থানীয় অবস্থানজনিত প্রয়োজনে।

    সানজিদা হোসাইন মিমিঃ আপনার সিদ্ধান্ত উপন্যাসটি উৎসর্গ করেছেন আপনার বাবাকে। সেখানে তাঁর সম্পর্কে চমৎকার কিছু কথা লেখা আছে। তাঁর সম্পর্কে আপনার কাছ থেকে আরো একটু জানতে চাই।

    ফৌজিয়া খান তামান্নাঃ আমার বাবা সম্পর্কে ‘একটু’ বলতে গেলে যা বলা যায়, তা সিদ্ধান্তের উৎসর্গেই লিখেছি। আরেকটু বলা সম্ভব না, বলতে গেলে একটি উপন্যাসই লিখতে হয়। শুধু এতটুকুই বলতে চাই, আমার জীবনদর্শনের সিংহভাগের কৃতিত্ব একমাত্র আমার বাবার। আমার লেখায় যেখানে যতটুকু বিশেষ কথা লিখেছি, তার বেশিরভাগই বিভিন্ন সময়ে আমার বাবার বলা কথা। আমার বাবা আপাদমস্তক একজন সৎ মানুষ। কীরকম সৎ, সে ব্যাখ্যা এতটুকু সাক্ষাৎকারে দেওয়া সম্ভব না। আমার একটি পরিচয়ই আনন্দ নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য যথেষ্ট ছিল যে, আমি আমার বাবার মেয়ে। সত্যি বলতে সাক্ষাৎকারে বাবা সম্পর্কে বলার মতো আমি আর কিছুই পাচ্ছি না।

    সানজিদা হোসাইন মিমিঃ আপনার জীবনে আপনার মায়ের প্রভাব কতটুকু?

    ফৌজিয়া খান তামান্নাঃ বাবা আমাকে দর্শন শিখিয়েছেন, কল্পনা করতে শিখিয়েছেন। আর মাকে দেখে শিখেছি, বাস্তবতার সংজ্ঞা। এক কথায় আমার কাছে আমার মা হলেন এরকম, “এমন কোনও কাজ সংসারে নেই যা আমার মা জানেন না। এমন কোনও সমস্যা সংসারে আসতে পারে না, যার সমাধান আমার মায়ের কাছে নেই।”

    সানজিদা হোসাইন মিমিঃ আপনার জীবনসঙ্গী একজন চিকিৎসক। সমাজের চোখে তার অবস্থান নিঃসন্দেহে অনেক উপরে। আপনার কাছে একজন চিকিৎসকের সহধর্মিণীর ভূমিকা কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ?

    ফৌজিয়া খান তামান্নাঃ আমি আসলে আমার জীবনসঙ্গীর সহধর্মিণী,  কোনও চিকিৎসকের নই। আমি জানি, তার পেশা কী। আমি এও জানি, এই সংক্রান্ত তার দায়িত্ব কতখানি। এরপর আমি তার কাছে সেটুকুই চাই, যেটুকু তার পক্ষে সম্ভব। সারাদিন তিনি আমাদের সঙ্গে কাটাবেন বা প্রতিটি ছুটির দিনে আমাদের নিয়ে ঘুরে বেড়াবেন, এসব চাওয়া বোকামি। তিনি যতটুকু চিকিৎসক ততটুকু তার উপর বর্তানো সারকারি কাজের ও রোগীদের। তারপরে তিনি আমাদের। এবং এতে আমাদের ছেলেমেয়ে বা আমার কোনও অপ্রাপ্তিবোধ নেই।

    সানজিদা হোসাইন মিমিঃ আপনার দুই সন্তান ঋষি এবং ঋজু। তাদের সম্পর্কে বলুন।

    ফৌজিয়া খান তামান্নাঃ আমার ছেলে ঋষি এবার এইচএসসি পরীক্ষা দেবে। আমি লিখতে শুরু করার পরে যখন বুঝতে শুরু করেছি, আমার কিছু কিছু বানানে সমস্যা আছে, তখন থেকে সন্দেহ হলেই ঋষিকে জিজ্ঞেস করে নিশ্চিত হয়ে নিই। যদিও ঋষি শুরু থেকেই ইংলিশ ভার্শনে পড়াশোনার করছে। আর মেয়ে ঋজুর বয়স সাড়ে তিন বছর।

    সানজিদা হোসাইন মিমিঃ এবার আসি আপনার কাজের প্রসঙ্গে। প্রথম উপন্যাস চলন্তিকা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত ‘গহীনে আঁচ’ ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে। এই উপন্যাসের নেপথ্যের গল্পটা শুনতে চাই।

    ফৌজিয়া খান তামান্নাঃ গড়ে সকল লেখকের কথা বলতে চাই না, তবে আমি যা লিখি তার বেশিরভাগই জীবনে হেঁটে আসতে ডানে বায়ে যাদের যেটুকু দ্রষ্টব্য মনে হয়েছে, সেসবের পরিমিত মিশেল। কখনও একজনের পাঁচটি বৈশিষ্ট্য আমি পাঁচটি আলাদা চরিত্রে চয়ন করেছি, আবার কখনও পাঁচজন থেকে চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য এনে একটি চরিত্রে বিলীন করেছি। এসবই করি, একটি উপন্যাসে আমি যা বলতে চাই,তা বলার উদ্দেশ্য সফল করতে। ‘গহীনে আঁচ’ও এর ব্যতিক্রম নয়। ‘গহীনে আঁচ’ এর চরিত্ররা আমার চারপাশেই ছিল।

    সানজিদা হোসাইন মিমিঃ এরপর আরো দুটো উপন্যাস; ‘সিদ্ধান্ত‘ এবং ‘আনন্দলোকে‘। ‘সিদ্ধান্ত’ উপন্যাসের প্লট আপনার মাথায় কীভাবে এসেছিল?

    ফৌজিয়া খান তামান্নাঃ সিদ্ধান্ত উপন্যাসের প্লটেই আমার জীবনযাত্রা অতিবাহিত হয়। এটি আমার একদমই নিজের জীবনযাপন পদ্ধতি, আমার ভবিষ্যৎ নিয়ে পরিকল্পনা ও আমার সন্তানদের জন্য আমার দর্শন। আমার জীবনসঙ্গীর সঙ্গেও কখনও এই দর্শনে দ্বন্দ্ব হয়নি। এই প্লট আমি কোথাও থেকে হাতড়ে আনিনি। উপন্যাসের সঙ্গে আমার জীবনের তফাৎ হলো, আমার ছেলে বেড়েই উঠছে, আমার এই দর্শন আত্মস্থ করে, তাকে বোঝানোর জন্য আমার জীবনে সিদ্ধান্তের মতো কোনও দুর্ঘটনা ঘটাতে হয়নি। ইনশাআল্লাহ আমার মেয়েও আমাকে বুঝবে।

    সানজিদা হোসাইন মিমিঃ ‘আনন্দলোকে’ তো এবারের বইমেলায় এসেছে। পাঠকের কাছে কেমন সাড়া পেয়েছেন?

    ফৌজিয়া খান তামান্নাঃ ছোটোবেলা থেকে যেসব কাল্পনিক জীবন পাশাপাশি নিয়ে আমি বেড়ে উঠেছি, তার একটি সফল প্র‍য়োগ হলো, ‘আনন্দলোকে’। ‘আনন্দলোকে’ সম্পর্কে আমার নিজের আবেগের জায়গা থেকে আর কিছু বলার নেই। তুলনামূলক বিস্তৃত পরিসরের এই উপন্যাস যারাই ধৈর্য্য নিয়ে পড়েছেন, কেউ ভালো লাগার বাইরে কিছু বলেননি।

    সানজিদা হোসাইন মিমিঃ ‘আনন্দলোকে’ কেন ভালো লাগছে পাঠকের?

    ফৌজিয়া খান তামান্নাঃ ‘আনন্দলোকে’ উপন্যাসটিতে আমি অনেকগুলি আলাদা নারী চরিত্রের  সন্নিবেশ ঘটিয়েছি। যাদের পারিবারিক পরিচিতি, বয়স, অভ্যাস, চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য,  সামাজিক অবস্থান, সুখ-দুঃখ,  অভাব- চাহিদা সবকিছুই আলাদা। এবং এই এতজন চরিত্রের নানামুখী বৈশিষ্ট্য ও সমস্যায় পাঠক কোথাও না কোথাও নিজেকে খুঁজে পেয়েছেন। এদের সমস্যাগুলির পরিনতিতেও নিজেকে মিলিয়েছেন বা মেলাতে পেরেছেন। সেজন্যই বলব, ‘আনন্দলোকে’ পাঠকদের এত ভালো লেগেছে।

    সানজিদা হোসাইন মিমিঃ যখন আপনি কোনো উপন্যাস লেখা শুরু করেন, আপনার কি জানা থাকে সেটা কোথায় গিয়ে ঠেকবে? গাঁথুনিটা কি আগেভাগেই ঠিক করে নেন?

    ফৌজিয়া খান তামান্নাঃ আমার কাছে একটি উপন্যাসের শেষ মানে হলো, অনেকগুলি প্রশ্নের সমাধান ও একটি পরিনতি। আমার উপন্যাসের মাধ্যমে পাঠককে চিন্তায় ফেলতে চাই না। বরং একটি উপন্যাসের মাধ্যমে আমি চাই, পাঠকের চিন্তার পরসমাপ্তি ঘটুক। আর একারণেই আমি আগে উপন্যাসের শেষটা নির্ধারণ করে নিয়ে প্রশ্ন সাজাই, তারপর সেই অনুযায়ী চরিত্র সৃষ্টি করি। এবং সবশেষে ঠিক করি, ঠিক কোথা থেকে উপন্যাসটি যাত্রা শুরু করবে। উপন্যাস শুরু হয়ে গেলে আগেই তৈরি করা চরিত্ররা তাদের মতো করে কাহিনিকে গন্তব্যে নিয়ে যায়। তবে হ্যা, এসবের মধ্যেও কিছু লেখা, কিছু কথা চরিত্ররা নিজেরা তৈরি করে নেয়, যেসব জায়গায় আমার কোনও হাত থাকে না।

    সানজিদা হোসাইন মিমিঃ আপনার লেখায় গ্রামীণ মৌলিকত্বের একটা ছাপ পাওয়া যায়। আপনার কী মনে হয়? আপনার শৈশবের প্রভাব আপনার লেখার ওপর কতটুকু?

    ফৌজিয়া খান তামান্নাঃ আমার লেখায় যেটুকু গ্রামীণ ছাপ, সেটুকু আমার সহজাত, সেটুকু আমি নিজেই। আর এই ছাপটুকু আমি সযতনে আমার লেখায় রেখে যাই।

    শৈশবের প্রভাব আমার কোনও লেখায় এখনও আসেনি। তবে হ্যা, আসবে এবং মহা সমারোহেই আসবে।

    সানজিদা হোসাইন মিমিঃ এবার আপনার সম্পাদনায় আসি। সম্পাদকের ভূমিকায় আসলেন কীভাবে?

    ফৌজিয়া খান তামান্নাঃ সম্পাদকের ভূমিকায় আমি আসিনি। চলন্তিকার প্রকাশক একপ্রকার জোড় করে সম্পাদক নামের শব্দটি আমার ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছেন। মজার কথা হলো, আমি এখনও জানি না, ‘সম্পাদনা কাহাকে বলে।’ আমি সম্পাদক পদটির আবডালে যাই করি, তা শুধুই আমার পাঠক চাহিদা থেকে।

    সানজিদা হোসাইন মিমিঃ সম্পাদকের কাজ আসলে কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ? আমাদের দেশে প্রকাশনীগুলোতে সম্পাদনার কাজটি কি সঠিকভাবে হচ্ছে?

    ফৌজিয়া খান তামান্নাঃ প্রকাশনা জগতে সম্পাদকের ভূমিকা আসলে অনেকটাই ভাগ্যবিধাতার মতো, যদি…

    যদি, সম্পাদক চৌকস ও আন্তরিক হন। সেক্ষেত্রে সম্পাদকের সদিচ্ছার সঙ্গে কাজের স্বাধীনতা খুবই জরুরি। আমি প্রকাশনাগুলোর দুর্বলতার কথা  বলতে চাই না। তাদের সদিচ্ছা নেই, তাও বলব না। তবে সীমাবদ্ধতা অসীম, একথার পিঠে কেউই আশা করি, প্রশ্ন ফেলবে না। আমি নিজে সম্পাদনা করতে এসে বুঝতে পারছি, সম্পাদনায় অনেককিছু শেখার আছে। কিন্তু শেখাবার কেউ নেই, কিছুই নেই। সম্পাদনা নিয়ে একটি পোস্ট লিখতে গিয়ে এ-বিষয়ক বই খুঁজতে গিয়ে গুগলে সার্চ দিয়ে এবিষয়ে কিছুই পাইনি, এমনকি আমার আগে কেউ এর কাছাকাছি বিষয়েও সার্চ দিয়েছে বলে গুগলের কাছে ইতিহাস নেই। মোদ্দাকথা, সম্পাদনা অনস্বীকার্যভাবে জরুরি, কিন্তু উপযুক্ত সম্পাদক নেই বললেই চলে।

    সানজিদা হোসাইন মিমিঃ ‘রহস্যলীনা‘ দিয়ে আপনার সম্পাদনার শুরু। ‘রহস্যলীনা’র ৩টা সিরিজ ইতোমধ্যে অনেক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। এটি নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কী?

    ফৌজিয়া খান তামান্নাঃ ‘রহস্যলীনা’ নিয়ে আমার নানা পরিকল্পনা রয়েছে। তবে বিষয় বৈচিত্র্য নিয়ে বছরে অন্তত একটি সংখ্যা রহস্যলীনা আসবে, এটুকুই আপাতত বলতে চাই। খুব শীঘ্রই ‘রহস্যলীনা ৪’এর ঘোষণা আসবে কিছুটা চমকের সঙ্গে।

    সানজিদা হোসাইন মিমিঃ লেখক হিসেবে সমাজের কাছে একটি  দায়বদ্ধতা আছে বলে কি আপনি মনে করেন?

    ফৌজিয়া খান তামান্নাঃ অবশ্যই, অবশ্যই এবং অতি অবশ্যই। আমার আসলে অনেক কথা বলার আছে। এবং আমার ধারণা, কথাগুলি সবার জানা দরকার, সম্ভব হলে আত্মস্থ করাও দরকার। আমি সেই কথাগুলি জানানোর জন্যই লিখি। স্বভাবতই, কেউ যখন আমাদের কিছু শেখাতে চায় আমরা তা গ্রহণ করি না। আমরা সেটিই গ্রহণ করি, যা উপভোগ্য হয়। তাই আমি আমার কথাগুলি একেকটি উপভোগ্য উপন্যাসের কথার ভাঁজে ভরে পাঠককে উপহার দিই। আমি আমার অবস্থান থেকে আমার দায়বদ্ধতা  সম্পর্কে নিশ্চিত এবং সবসময়ই আন্তরিক চেষ্টা থাকে, সেখান থেকেই কিছু করার।

    সানজিদা হোসাইন মিমিঃ আপনি বর্তমানে চলন্তিকা প্রকাশনীর পরিচালক হিসেবে দায়িত্বরত আছেন। এই ভূমিকাটা আপনার কেমন লাগে?

    ফৌজিয়া খান তামান্নাঃ এক কথায়, অনেক চাপসম্পন্ন ভালো লাগার কাজ।

    সানজিদা হোসাইন মিমিঃ প্রথম বই প্রকাশের অনুভূতি কেমন ছিল?

    ফৌজিয়া খান তামান্নাঃ এই কথাটি আমি আমার মতো করে প্রকাশ করতে কিছুটা ভয় পাচ্ছি। এক কথায় বলতে গেলে, প্রথম বই প্রকাশের অনুভূতি ছিল বর্ণনাতীত। তবে আমার বইগুলি প্রকাশের আগেই উপন্যাসগুলি অনলাইনে কয়েক হাজার পাঠক পড়ে নিত্য দারুণ সব মন্তব্য করতেন। একটি পর্ব লিখে তাৎক্ষণিকভাবেই আমি আমার ভালো লাগার সর্বোচ্চ শিহরণ নিয়ে নেয়ার পরই আমার বই প্রকাশ হয়। তাই পাঠকদের কাছ থেকে যে ফিডব্যাক পাওয়ার অনুভূতি, তার তৃষ্ণা অনেকটাই কম ছিল। যেটুকু অবিষ্মরণীয়তা ছিল, তা মলাটবদ্ধ নিজের লেখাসহ নিজের নামটি দেখার অনুভূতিতে।

    সানজিদা হোসাইন মিমিঃ একজন লেখকের পক্ষে কি তার লেখা দিয়ে সমাজব্যবস্থায় পরিবর্তন আনা সম্ভব? সেটা কীভাবে?

    ফৌজিয়া খান তামান্নাঃ একজন লেখকের পক্ষে তার লেখা দিয়ে অবশ্যই সমাজব্যবস্থায় পরিবর্তন আনার চেষ্টা করা যায় এবং লেখায় সেই ধার থাকলে পরিবর্তন আনাও সম্ভব। তবে সবার আগে লেখকের নিজেরই বুঝতে হবে, তিনি কেন লিখতে চান। লেখক যদি চান, শুধুই বিনোদন দেবেন, তবে পাঠক বিনোদিত হবেন। লেখক যদি চান, পাঠককে হাসাবেন, পাঠক হাসবেন। লেখক চাইলে পাঠক কাঁদবেন। সর্বোপরি লেখক চাইলে তার উপাদেয় লেখা দিয়ে পাঠককে শেখাতেও পারবেন।

    সানজিদা হোসাইন মিমিঃ লেখালেখি ছাড়া আর কী কী করতে ভালোবাসেন?

    ফৌজিয়া খান তামান্নাঃ সংসার করতে, রান্না করতে, খাওয়াতে, খেতে, উপহার দিতে, কাউকে চমকে দিতে, ঘুমাতে, আলসেমি করতে, আড্ডা দিতে, ঝগড়া করতে, অযথা কথা বলতে, ছেলেকে বকাঝকা করতে, স্বামীর সঙ্গে বিতণ্ডা করতে ভালোবাসি। মোটকথা, আমার ভালোবাসায় অসাধারণ কিছুই নেই। তবে, নতুন নতুন কাজ শেখা এবং সেই কাজে মোটামুটি দক্ষ হওয়া আমার এক অদ্ভুত শখ। এখন আর নতুন কাজ সামনে পাই না, আর সময়ও হয় না। তবে বাগান করার শখটি ধরে রেখেছি। গাছদের সঙ্গে কথা বলা আমার অবুঝ বয়স থেকে অভ্যাস। আর বই পড়ি, ভালোবাসি বলে নয়, বই না পড়ে উপায় নেই তাই। একসময় ছবি এঁকে এবং ছবি আঁকা শিখিয়ে হাত খরচ চালাতাম। এখন সেসব ইতিহাস। বেড়াতে পছন্দ করি। সুযোগ পেলেই বিনা নোটিশে বেড়াতে বের হই। এতকিছুর পরেও সবচেয়ে পছন্দের কাজ, মানুষ দেখা আর কল্পনা করা। আর এজন্যই তো লিখি।

    সানজিদা হোসাইন মিমিঃ নবীন লেখকদের প্রতি আপনার কী পরামর্শ?

    ফৌজিয়া খান তামান্নাঃ পরামর্শ ঠিক বলব না, কিছু কথা অবশ্যই আছে। এখন তো লেখক মানেই ফেসবুকে প্রথম লেখা দেওয়া। তারপরই একটু একটু করে সামনে বাড়া। আমি নতুন পুরানো সবাইকেই বলতে চাই, ‘ আপনার লেখার সমালোচকদের সঙ্গে ঝগড়া করুন, সমস্যা নেই। কিন্তু তার সমালোচনাটুকু নিজের মধ্যে আউড়ে নিয়েন। কাজে দেবে।’

    সানজিদা হোসাইন মিমিঃ এখনকার লেখকদের সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?

    ফৌজিয়া খান তামান্নাঃ আজ থেকে কয়েক দশক পরে এখনকার এই সময়টি বাংলা সাহিত্যের নবজাগরণের যুগ হিসেবে লেখা হয়ে থাকবে। এটি আমার স্থির বিশ্বাস। আমরা যতই চিরায়ত সাহিত্যের নামে পুথি পাঠ করি না কেন, বাংলা সাহিত্যে এখনকার সময়ে যে ধরনের নানামুখী কাজ হচ্ছে, তা আগে কখনোই হয়নি।

    সানজিদা হোসাইন মিমিঃ সাহিত্য চর্চার জন্য কোনো অনুশীলন কেন্দ্র প্রয়োজন আছে বলে কী আপনি মনে করেন?

    ফৌজিয়া খান তামান্নাঃ অবশ্যই, দরকার আছে। এবং এই লক্ষে আমি নিজেই চলন্তিকার উদ্যোগে কিছু করার চিন্তাভাবনা করছি। দেখি, কতদূর কী করা যায়!

    সানজিদা হোসাইন মিমিঃ বর্তমান প্রজন্ম বই পড়ে না বলে একটা রীতি চালু হয়ে গেছে। তাদেরকে কিভাবে বইমুখী করা যায়?

    ফৌজিয়া খান তামান্নাঃ বাচ্চাদের ছোটোবেলা থেকেই গল্প শোনাতে হবে। কখনো মুখস্ত, কখনো বই থেকে পড়ে পড়ে। একসময় তাদের নেশা ধরে যাবে গল্প শোনার। তারপর যখন তারা নিজেরাই পড়তে শিখবে, তখন বই থেকে গল্প কিছুদূর পড়ে শুনিয়ে রেখে দিতে হবে। তখন তারা নিজেরাই বাকীটা পড়ে নেবে। এই পদ্ধতিতে আমি আমার অনেক বন্ধুকেও বই পড়া ধরিয়েছি।

    সানজিদা হোসাইন মিমিঃ একজন লেখক সারাজীবন লিখে সফল হলেন না ব্যর্থ হলেন সেটা নির্ণয়ের উপায় কী?

    ফৌজিয়া খান তামান্নাঃ খুব কঠিন একটি প্রশ্ন, তবে জবাবটি সহজ।

    লিখে সফলতা লেখক নিজে নির্নয় করতে পারবেন না। শুধু লেখকই নন, কোনও সৃষ্টিশীল মানুষ যদি কিছু সৃষ্টি করে নিজেকে সফল মনে করেন, তবে তার সৃষ্টিশীলতার দুয়ারে সেখানেই খিল পড়ে যাবে। যতখানি অতৃপ্তি নিয়ে একেকটি সৃষ্টি সম্পন্ন হবে, ততই নতুনত্বের পথে যাবে সৃষ্টিশীলতা। লেখক  তার চাওয়াটুকু লিখতে পেরে তৃপ্তি পেতে পারেন, কিন্তু নিজেকে সফল ভাবলেই থেমে যেতে হবে।

    সানজিদা হোসাইন মিমিঃ আপনার নিজের সম্পর্কে নিজের মূল্যায়ন কী?

    ফৌজিয়া খান তামান্নাঃ আমার ভেতরে সবসময় ভালো এবং মন্দ, বিশ্বাস এবং অবিশ্বাসের দ্বন্দ্ব চলছে, অবিরাম। আমার চেষ্টা  থাকে এই দ্বন্দ্ব থেকে উত্তম কিছু বের করে আনার।

    আমার দুটি ভালো দিক হলো;

    ১. আমি কখনও এই মিথ্যাটি বলি না, ‘ আমি কখনও মিথ্যা কথা বলি না।’

    ২. আমি কখনও এই অহংকারটি করি না, ‘ আমার কোনও অহংকার নেই।’

    সানজিদা হোসাইন মিমিঃ আপনার পাঠকদের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন।

    ফৌজিয়া খান তামান্নাঃ আমার পাঠকদের বলব, আরও অনেক বইয়ের পাশাপাশি আমার বই পড়ুন। ভালো লাগলে, না বলতে চাইলে না বলুন। কিন্তু কেন খারাপ লাগল, সেই কথাটা সরবে বলুন।

    সানজিদা হোসাইন মিমিঃ আমাদেরকে আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।

     

    আজ থেকে কয়েক দশক পরে এখনকার এই সময়টি বাংলা সাহিত্যের নবজাগরণের যুগ হিসেবে লেখা হয়ে থাকবে ।ফৌজিয়া খান তামান্না

    সানজিদা হোসাইন
    Sanjida Hossain
    একই ধরনের লেখা

    আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুনঃ

    আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
    এখানে আপনার নাম লিখুন

    - Advertisment -
    Google search engine

    সব থেকে বেশি পঠিত পোস্ট

    সাম্প্রতিক মন্তব্য